নোমান সিকদার, চরফ্যাসন(ভোলা) ॥ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অনেক উৎসাহ-উৎসবের মধ্যদিয়ে চরফ্যাসনে তরমুজ কাটা শুরু করলেও অল্পতেই কৃষকের এমন উৎসবে ভাটা পড়েছে। চলতি মৌসুমে তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও করোনা প্রদূর্ভাবে চরফ্যাসনের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির তরমুজ নিয়ে বিপাকে পরেছে কৃষকরা। কঠোর লকডাউনে দেশব্যাপী ‘অবরুদ্ধ’অবস্থা বিরাজ করায় মৌসুমের উঠতি ফসল তরমুজ নিয়ে কোথায় যাবে তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ২০ হাজার কৃষক। করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের কারনে ভোলা জেলার সাথে সারা দেশের নৌযান বন্ধ ও স্থল পথে পরিবহন সিমিত আকারে থাকায় কৃষকরা তরমুজ তুলে বাজারজাত করতে পারছেন না। মাঝে মধ্যে দুই একটি ট্রাক পেলেও স্থানীয় সাপ্তাহিক হাট বন্ধ থাকায় সরবরাহ করা না যাওয়ায় বিক্রি হচ্ছেনা কৃষকের তরমুজ। চলমান পরিস্থিতিতে ভোলার বাহিরের পাইকার না আসায় এবং নৌযান বন্ধ থাকায় এতো তরমুজ দ্রুত ঢাকা,বরিশাল,চট্রগ্রামের মোকামে পাঠানোর উপায় নেই ফলে চাষিরা সঠিক সময়ে তরমুজ না কাটায় পচন ধরেছে ক্ষেতে। জমি লগ্নী ও চড়া সুদে দাদন পরিশোধ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছেন কয়েক হাজার কৃষক। পচনশীল এই ফসল নিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখোমুখি দাড়িয়েছে কৃষকরা। তরমুজ নিয়ে এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে তরমুজ এখন কৃষকের গলায় বিদ্ধ কাঁটায় রুপ নিয়েছে। চরফ্যাসন কৃষি অফিস সুত্রে জানাযায়, চরফ্যাসন উপজেলার চরকলমি, নজরুল নগর, মজিব নগর,ও আহাম্মদপুর ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর আবাদ কম হলেও তরমুজের বম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রায় ১২ হাজার টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। সঠিক ভাবে ভোলার বাহিরে বাজার জাতকরন ও লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সঠিক বাজার মূল্য নিয়ে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। তাই চাহিদা তুলনায় বাজার মূল্য খুঁজে পাচ্ছেন না কৃষকরা। কৃষকরা জানান, জমি লগ্নী ও লেবার খরচসহ প্রতিকানি (১৬০ শতাংশ) জমিতে তরমুজ আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। ফলন শেষে সঠিক ভাবে বাজারজাত করতে পারলে বিক্রিমূল্য দাড়ায় দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা। বর্তমান পরিস্থিতে লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচ উঠানোর নিশ্চয়তাও নেই। পাকা তরমুজ বাজারজাত করণের কোন সুযোগ না থাকায় এমন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বর্তমান পরিস্থিতে লাভের মুখ দেখছেন না চাষীরা। পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করতে না পারায় ক্ষেতেই পঁচতে শুরু করেছে তরমুজ। তাই মুলধন হারানোর উপক্রম শুরু হয়েছে কৃষকের। মুজিব নগর ইউনিয়নের তরমুজ চাষী করিব হোসেন জানান, প্রতি বছর এই সময়ে ঢাকা, বরিশাল, চাঁদপুর, চট্রগ্রাম থেকে বেপারীরা ঝাঁকে ঝাঁকে হুমড়ি খেয়ে পরেছে তরমুজ ক্ষেতে। ক্ষেতে রেখেই তরমুজের সিংহভাগ বিক্রি হয়ে যেতো। কিছু কিছু কৃষকরা ট্রাক-ট্রলার বোঝাই করে শহরের আড়ৎ গুলোতে তরমুজ পাঠাতেন। কিন্ত করণার প্রভাবে এবছর বেপারীর দেখা নেই। মিলছে না ট্রাক-ট্রলার। কমসংখ্যক হলেও শহরমুখী তরমুজের চালানগুলো বিক্রির কোন নিশ্চয়তা নেই। ফলে কৃষকরা ঠিক বুঝতে পারছেন না, ক্ষেতে পাকা তরমুজগুলো কি করবেন। নজরুল নগর ইউনিয়নের কৃষক আলাউদ্দিন জানান, গত বছরের তরমুজ আবাদ করে লোকশান হওয়ায় এবছরে মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে দাদন নিয়ে এবছরে তিনি ৫ কানি(১০ একর) জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। এতে তার জমি লগ্নী নিয়ে তরমুজ আবাদে খরচ হয়েছে ৪ লাখ টাকা। প্রায় সাড়ে চার হাজার তরমুজ বিক্রি উপযোগী হয়ে উঠেছে তার ক্ষেতে। মৌসুমের শুরুতে কিছু বিক্রি করলেও হঠাৎ দেশব্যাপি করোনা পরিস্থিতির কারণে লকডাউন ঘোষণায় ঢাকা চট্রগামসহ বড় বড় শহরের পাইকার আসেনি এসব এলাকায়। তাই তার ক্ষেতের তরমুজ বিক্রি করতে পারছেন না। নিজ উদ্যোগে যে শহরমুখে তরমুজ নিয়ে যাবেন তাও পারছেন না। কারণ বিক্রির কোন নিশ্চয়তা নেই। ফলে কয়েক লাখ টাকা লোকশানের মুখে দাড়িয়েছেন তিনি। ফলে তরমুজ আবাদ করতে গিয়ে চড়া সুদের ঋন শোধ করা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছেন আলাউদ্দিনের মতো উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক। চরফ্যাসন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হাসনাইন জানান, এবছরে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। করোনা পরিস্থিতে তরমুজ নিয়ে সংকটে পরেছে কৃষকরা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারী পুর্নবাসনের আওয়াতায় আনার চেষ্টা করা হবে।
Leave a Reply